লিখেছেন: আহমদ জসিম
(১)
বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা আজ ভয়ানক সংকটের মুখোমুখি। বিষয়টার গভীরে না গিয়ে ভাসাভাসাভাবে দেখলে মনে হতে পারে শাসকের অদক্ষতার ফলেই বুঝি আজকের এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাসীর কাছে দৃশ্যমান সংকট–এর অনিবার্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা প্রায় দেড় শত বছর পূর্বেই কার্ল মার্কস দিয়ে গেছেন। মার্কস তাঁর পুঁজি (Das Capital) গ্রন্থে মুনাফাকে তুলনা করেছেন পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে, যে পাগলা ঘোড়া পুঁজি মালিকের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ছুটে চলে অদম্য গতিতে। মার্কসের অমোঘ বাণীকে সত্য প্রমাণ করে আজ যেন পুঁজির সেই মৃত্যু ঘন্টার ধ্বনিই দিকে দিকে বেজে উঠছে। আজ খোদ পুঁজিবাদের মোড়ল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বুকেই জেগে উঠছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণজাগরণ! এখন বিজ্ঞ জনেরা প্রশ্ন তুলতে পারেন, এই ‘অক্যুপাই ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্ট’ নামের সংগ্রাম বিশ্ব রাজনীতির কোন গুণগত পরিবর্তন আনবে কী না? সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো– না। কারণ একটি বিপ্লবী সংগ্রাম অবশ্যই একটি সঠিক বিপ্লবী পাটির অধীনেই হতে হবে। তবে হ্যাঁ, এই সংগ্রাম আমাদের এক পরম সত্যের প্রমাণ আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বুর্জোয়া মিড়িয়া আমাদের সামনে পুঁজিবাদি দুনিয়ার যে চাকচিক্যপূর্ণ জীবনের ছবি দেখায় এটা আসলে একদম ফাঁপা, অন্তরসারশৃন্য। আজ প্রায় একশত বছর ধরে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সারা বিশ্বব্যাপী দস্যুবৃত্তি করে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশের সম্পদ দখল করতে গিয়ে হত্যা করছে কোটি কোটি মানুষকে। অথচ তারাই নিজের দেশের জনগণের ন্যুনতম জীবন ধারণের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারেনি। আজ খোদ মার্কিন দেশেই বেকার মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লক্ষ। এমন বেকার আর হতাশাগ্রস্ত মানুষের সামান্য বিষ্ফোরিত রূপ দেখলাম ‘অক্যুপাই ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্টে’। এই বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে পুঁজির দাসত্ব বরণকারী করপোরেটদের পোষা সুশীল বুদ্ধিজীবীরা আদাজল খেয়ে নেমেছে পুঁজির মরণ ব্যাধি ঘা–তে মলমের প্রলেপ দিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আয়ুষ্কালটা আরো খানিক দীর্ঘ করার প্রয়াসে। এমনই এক প্রয়াস আমরা লক্ষ করলাম কর্পোরেট মিড়িয়া ‘প্রথম আলো’র ত্রৈমাসিক প্রকাশনা ‘প্রতিচিন্তা’র সম্পাদকীয়তেও। মানুষ তাঁর কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বুঝে যুক্তি হচ্ছে সত্যের কিতাবি রূপ। ব্যক্তির সামনে যখন সত্য থাকে না, তখনই শুরু হয় মন্তব্য দিয়ে সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা। প্রতিচিন্তার সম্পাদকীয়তে ঠিক এই কাজটাই করা হলো, কোন রকম যুক্তির ধারে কাছে না গিয়ে মন্তব্য করা হলো: ‘সাধের সমাজতন্ত্র প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেছে।’ সমাজতন্ত্র যেন কোন গণভোটের রায়, যেটা হ্যাঁ–না ভোট দিয়েই নির্ধারিত হবে। সমাজতন্ত্র হচ্ছে সমাজ বিকাশের একটা স্তর, পূর্বের সামন্তবাদ যদি সত্য হয়, আজকের পুঁজিবাদ যদি সত্য হয় তারই ধারাবাহিকতায় সমাজতন্ত্রও সত্য। প্রতিচিন্তার প্রকাশ ও ভূমিকার মধ্যদিয়ে কর্পোরেট প্রথম আলো গোষ্ঠী তার পুঁজিবাদী–সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জায়গাটা পাঠকের কাছে পরিষ্কার করলো। একই সাথে পরিষ্কার করা উচিৎ ছিল তার বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত তথাকথিত নিরপেক্ষতার অর্থ কী? তো, প্রতিচিন্তার ভূমিকায় সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হবার কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলোকে পাঠকের সামনে হাজির করা হয়েছে সেই কারণগুলোর মুদ্দাকথা এই রকম: “১) বাজার ব্যবস্থা চালু রাখার স্বাভাবিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করা; ২) প্রতিযোগিতামূলক গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বীকৃতি না দেওয়া; ৩) সংবাদপত্র–মিড়িয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি না দেওয়া; ৪) পার্টি ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাওয়া ‘অপর’–এর ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন।” (বিস্তারিত…)