লিখেছেন: অরবিন্দ অনন্য
আমি ঘুমোতে পারি না!
আমাকে যেন সারা রাত জেগে থাকতে হবে!
আমার বড় কষ্ট হয়।
আমি ঘুমোতে পারিনা, স্বপ্ন দেখতে পারি না!
স্বপ্ন ভঙ্গের ভয়ে আমি জেগে উঠি
আমার শরীর ঘেমে যায়
এই সমাজ আমাকে কলুষিত করে
ভদ্রতার মুখোশ পড়তে বলে!
হতে বলে চরম মানবতাবাদী!
আমি যেন মানবতার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিব!
অথচ আমি সুযোগের অপেক্ষায় থাকি।
এই সমাজ আমাকে টেনে নেয় দস্যুদের দলে
যেখানে আমি লুট করি অসহয় মানুষের সম্বল
আমি লুট করি সম্ভ্রম, লুট করি ওদের অস্তিত্ব!
যা ধরে ওরা বাঁচতে চাই
ওদের তো একটাই অধিকার
সেটাও আমি লুট করি।
এই সমাজ আমাকে মাতাল করেছে
আমার শরীরে যেন মদের উৎকট গন্ধ,
এই উৎকট গন্ধ সবার কাছে যেন সুগদ্ধি লাগে!
আমার মনে হয় ওদের নাসিকা ঘ্রাণ নিতে ভুলে গেছে
সত্যি আমার কাছে আমাকে অদ্ভুত লাগে
যেখানে কিছুই যেন অদ্ভুত না
সেখানে আমাকে অদ্ভুত লাগা বিস্ময়কর!
এই সমাজ আমাকে ভাবতে দেয় না!
আমাকে রাখে চোখ ধাঁধানো আলোর মাঝে
যেখানে সব কিছু –
আলো সুন্দর দেখায়,
সমান ভাবে দেখায়;
কিছু যেন নতুন নয়,
কিছু যেন বিস্ময়ের নয়;
এ যেন অতীব কোন সিস্টেম
মেনে নেওয়াই তোমার কাজ।
এ সমাজ আমাকে কুঁকড়ে মুকড়ে দেয়
আমি যেন রাস্তার কোন সস্তা পতিতা
আমি যেন এই সমাজের কাছে নিজেকে ভাড়া দি
আমি যেন সাধারণের চেয়ে অতি সাধারণ
আমি তো হাজারও পতিতার মতো একজন
আমার আবার মান কিসের?
আমার আবার ইজ্জত কিসের?
আমার আবার সম্ভ্রম কিসের?
আমি কেন জানি চিৎকার করতে পারি না!
আমি নিজে নিজে যেন গলা চেপে ধরি;
আমি যেন সারা জীবন বাকরুদ্ধ থাকতে চায়!
এ সমাজ আমাকে গান গাইতে দেয় না গুনগুনিয়ে!
আমার গান নাকি ঘুম ভাঙাবে ওদের;
যারা কথা বলতে চাই
যারা আলো দেখতে চাই,
যারা চিৎকার করতে চাই,
যারা ভাবতে চাই,
যারা গান গাইতে চাই গায়েনের দলে মিশে
চাই হতে দেশান্তরী!
এই সমাজ আমাকে জোর করে
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে নামায়
আমি যেন করতে বাধ্য!
আমি যেন কলুর বলদ!
আমাকে যেন নাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিয়েছে
আস্ত একটা খুঁটির সাথে
যাকে কেন্দ্র করে
আমি ঘুরছি তো ঘুরছি!
এই সমাজ আমাকে কিছু প্রশ্ন না করে
সমাজের নিজের মতো করে মেনে নিতে শেখায়!
যা মানার মতো নয়
তাও হজম করতে হয়
আমি যেন হজমের ট্যাবলেট খেয়েছি!
আমি জানি না –
কবে আমার বদ হজম হবে,
কবে আমি গান গাইতে পারব,
কবে চিৎকার দিয়ে বুক ফাটিয়ে দিব
কবে আমি চোখ ঝলসানো আলো থেকে বের হব
কবে আমি অবাধ্য হব,
কবে আমি দেশান্তরী হব!
তবে আমি জানি সব কিছু ভাঙবে
ঐ চোখের পলকের মাঝে
যা আমার অনাগত
আমার চরম বাড়াবাড়ি
আমার দংশিত চরম পন্থার
মাঝে খুঁজে পাব
কোন ক্ষুদ্র ঝাঁকুনি
যা আমাকে ঝাঁকিয়ে দিবে একবার
শুধু একবার
মৃদু রিখাটারের ভূমিকম্পের মতো!
ঐ মৃদু রিখাটারের ভূমিকম্পই এখন আমার ভরসা!
যা আমি চোখে দেখেছি
ঐ আকাশের তারার মতো
যা আমায় আলো দেয় চাঁদের চেয়েও
অনেক গুণ বেশি !!